মুন লাভারস: স্কারলেট হার্ট রাইও

মুন লাভারস: স্কারলেট হার্ট রাইও
“চন্দ্র প্রেমীদের লাল হৃদয় অথবা রক্তাক্ত হৃদয়”,,অনেকটা ইতিহাস অনেকটা কাল্পনিক। কোরিয়ার প্রাচীন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইতিহাস হলো গোরিও ইতিহাস। গোরিও যুগের ওয়াং রাজবংশকে কেন্দ্র করেই মুন লাভার্স।

আই ইন্ড আপ ক্রায়িং

আই ইন্ড আপ ক্রায়িংশত নিয়মের কাঁটাতারে বাধা এক রাজ্যের গল্প। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এই বংশে চারজন রাজা ছিলেন King Taejo, Hyejong, Jeongjong, Gwangjong. আর এই রাজত্বের পিছনে আছে হাজারো হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করা রক্তাক্ত গল্প।

মুন লাভারস স্কারলেট হার্ট রাইও

Drama :মুন লাভারস: স্কারলেট হার্ট রাইও
Episode : 20 + 2 specials
Runtime : 1 hr per epi
Country : South Korea (2016)
IMDB Rating : 8.7/10
Genre : History, Romance, Time travel, Tragedy.
Cast : Lee Joon Gi, IU, Kang Ha Neul, Nam Joo Hyuk, Beakhyun, Jisoo

কাহিনী সংক্ষেপঃ আধুনিক পৃথিবী,, একটা মেয়ে হঠাৎ করেই পানিতে ডুবে গেলো এবং নিজেকে আবিষ্কার করলো সম্পূর্ণ অন্য একটা পৃথিবীতে,প্রাচীন গোরিও যুগে। বলা যেতে পারে ঐ সময়ের ললাট পাল্টে দিতে তাকে পাঠানো হয়েছিল। সময়টা লুনার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 940 সালের কিছু এপাশ ওপাশ হয়তো।

তখন গোরিও রাজা তেওজোর রাজত্ব। নায়িকা গিয়ে পড়লো রাজার সাত ছেলের মাঝখানে। সবাই তাকে হে -সো বলেই সম্বোধন করতে থাকায় তাকে মেনে নিতে হলো প্রাচীন একটা সময়কে।সাত রাজপুত্রের চারজন প্রিন্স ই হে-সোর প্রতি ইমোশনাল অর্থাৎ চারজন ই তার প্রেমে পড়ে।

চতুর্থ রাজপুত্র ওয়াং সো

প্রথমত অষ্টম রাজপুত্র ওয়াং উক,, চতুর্থ রাজপুত্র ওয়াং সো, দশম রাজপুত্র ওয়াং ইউন এবং চতুর্দশ রাজপুত্র ওয়াং জাং। চতুর্থ এ্যাঙ্গেলের প্রেম দেখতে পাবেন যদিও এই প্রথম দেখলাম দুইজনকে সমান প্রায়োরিটি দিতে। চতুর্থ এবং অষ্টম প্রিন্স কে ঘিরে হে – সোর অন্যরকম ভালবাসার উদাহরণ ছিলো ড্রামাটিতে। এভাবেই কাহিনী আবর্তিত হয়।

প্রিন্সদের জীবনচক্রঃ থার্ড প্রিন্স ওয়াং ইওঃ ড্রামার অন্যতম বিচ ক্যারেক্টার হিসেবে পরিচিত এই রাজপুত্র। যদিও আমি তাকে এতখানিও ভিলেন ভাবিনি। রাজা রাজত্বের ঐ দুনিয়ায় টিকে থাকার চেয়ে বড় আর কিছু ছিলো না। সেটা প্রিন্সের লাস্ট মুহূর্তের যন্ত্রণা খুব ভালো ভাবে দেখিয়ে গেছে।

রাজত্ব পাওয়ার পরে রাজা যে সবথেকে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে তা এই চরিত্র থেকে একটু হলেও বুঝতে পারি। ইনিই ছিলেন কিংডম অফ গোরিও এর তৃতীয় রাজা জেওংজুন।ফোর্থ প্রিন্স (স্টার অফ কিং) ওয়াং সোঃ মহাকাব্যিক চরিত্র,জ্বলন্ত নক্ষত্র। ধারালো চোখ, হিংস্র সিংহের মতো গর্জন, মারাত্মক লেভেলের মিষ্টি হাসি ইনিই হলেন গোরিও রাজ্যের চতুর্থ রাজা গংজুন।

গোরিও যুগের শ্রেষ্ট

ছোট থেকেই মায়ের চরম অবহেলার স্বীকার,, হিংস্র জানোয়ারদ‌ের‌‌‌ সাথে লড়াই করে টিকে থাকা বীরযোদ্ধা। স্টার অফ এ কিং। গোরিও যুগের শ্রেষ্ট এবং বুদ্ধিমান রাজা। যদিও এর পিছনে আছে ব্লাডি ইতিহাস। জন্ম ৯২৫ সালে, মাত্র ২৫ বছর বয়সে ৯৪৯ সালে রাজত্ব লাভ করেন।

স্কারলেট হার্ট রাইও

বিয়ে করেন হাফ সিস্টার ইউনহা কে। কোর্ট লেডি হে সো কে ভালোবাসতেন। ভালোবাসা পূর্নতা পায়নি তবে ভালোবেসেছিলেন হৃদয় মন উজাড় করে। হিস্ট্রি অনুযায়ী ৫০ বছর বয়সে মারা যান।এইট প্রিন্স ওয়াং উকঃ ভালোবাসার আরেকটা মূর্ত প্রতীক এই রাজপুত্র।

ভালোবাসার মানুষকে শেষবার জড়িয়ে ধরে বলেছিল,,, তুমি নিশ্চয় আমাকে বুঝবে,,, কেনো আমি এমন হয়েছি। ভুলে যেয়ো সবকিছু, ভালো থেকো। বিশ্বাস করেন এই চরিত্র আমাকে অনেক পেইন দিয়েছে। অবশ্যই আপনাকে আড়ালের যন্ত্রণা টা খুজতে হবে। হরিণীর মতো মায়ামায়া চোখ,, ঐ চোখে যেনো রাজ্যের বিষাদ,,, বলতে বলতেও থেমে যাওয়া দুটো ঠোঁট।

সুদর্শন রাজপুত্র হলো বেক আ

চোখ আর ঠোঁটের অভিনয় ছিলো মারাত্মক। ভালোবাসার জন্য রাজা হওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন বারবার। এই চরিত্র কখনো এক চিমটি সুখ পাইনি যা আমাকে খুব করে হার্ট করছে।টেনথ প্রিন্স ওয়াং ইউনঃ এই আরেকটা হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া ক্যারেক্টার।

শিশিরের মতো স্নিগ্ধ একটা ছেলে। হাসিতে মিশে আছে হৃদয় জুড়ানো মুগ্ধতা। চোখে ছোট্ট স্বপ্ন,, বাচ্চা বাচ্চা ব্যবহার। রাজা, রাজত্ব যাকে কখনো স্পর্শ করে নি স্বপ্ন ছিলো একটা শপ করার। যখন দেখছি চোখের সামনেই কিভাবে তার উপর এ্যাটাক হলো আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেছিলাম।

সবথেকে বেশী যন্ত্রণায় মৃত্যু হয়েছে। বুকে বিঁধে থাকা ধনুকের একটু একটু যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে গিফট হিসেবে মৃ‌‌‌ত্যুকে চেয়েছে,,, শেষবেলায় ভালোবাসার মানুষের হাতটা ধরতে পারে নি,,, বারবার বলেছিল আমাদের যেতে দাও,, কখনো এই রাজ্যে ফিরে আসবো না।থারটিন প্রিন্স বেক আঃ অনেক গুলো রাজপুত্রের মাঝে যার দিকে সবার আগে চোখ পড়বে,, সেই সুদর্শন রাজপুত্র হলো বেক আ।

মা ভক্ত ছেলে

চিত্রকলায় পারদর্শী,, মিউজিক প্রেমী,, শেষবেলায় যাযাবর হওয়া এক কাব্যিক চরিত্র। ফোর্থ প্রিন্সের সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলো। হে-সোর ভীষণ ভালো একজন বন্ধু,, মদ্যপানের সঙ্গী। ভালোবাসা হারিয়ে আজীবন বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একজন প্রেমিক।ফোরটিন প্রিন্স ওয়াং জাংঃ ভালোবাসায় নিবেদিত প্রাণ এক প্রেমিক।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো প্রতিদান ছাড়াই নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে গেছে। রাজ্যে ছেড়েছে,, নিরবে নায়িকার সাথে থেকেছে শেষ পর্যন্ত। মা ভক্ত ছেলে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কিছু সুন্দর স্মৃতি ছাড়া তার নিজের বলতে কিছুই ছিলো না।নোবেল ক্যারেক্টার হে -সোঃ ড্রামার অন্যতম চরিত্র,যাকে কেন্দ্র করে কাহিনী আবর্তিত হয়েছে নিজ নিজ অক্ষে।

সাত রাজপুত্রের মাঝখানে পড়ে জরাজীর্ণ একটা ক্যারেক্টার ও বলা যায়। আমার নিজের ই মাঝে মাঝে দমবন্ধ লাগতো হেসোর অবস্থা অনুভব করে। ভালোবাসা পেয়েছে প্রচুর, কিন্তু কারো ভালোবাসা তাকে মুক্তি দিতে পারে নি। সময়ের সাথে সাথে চরিত্রের উন্নয়ন ছিলো ভীষণ সুন্দর।

এটা ইতিহাসের শিক্ষা

লেডি ওহ র অনেক কাছের কেউ হয়ে গেছিলো। যিনি ছিলেন মর্যাদার রাণী। কি যে কান্না পাচ্ছিলো ঐ মুহূর্তে যখন একজন নিষ্পাপ মানুষ কিভাবে নিজেকে বিসর্জন দিলো দেখছিলাম। রাজার জন্য, হেসোর জন্য আমার অনেক বেশী খারাপ লাগছিলো। আর শেষটার কথা কি বলবো,,,,, যে আমি কখনো ড্রামা দেখে কাঁদি না অজান্তেই কাঁদছি।

নিজস্ব মতামতঃ এই ড্রামা নিয়ে বলতে গেলে শেষ ই হবে না এত এত চরিত্র,, এত এত কাহিনী। তবে আমি যেটা শিখছি,,, রাজত্ব পাওয়ার চেয়ে রক্ষা করা অনেক কঠিন। বাইরে থেকে একজন যোদ্ধা, একজন রাজপুত্র যত ক্ষমতাবান থাকে রাজা হওয়ার পরে ছোটখাটো ক্ষমতা থাকলেও অপশক্তির কাছে তখন সে কিছুই না। রাজাদের ট্রাজিক সব মৃত্যু আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছে আমি ফিল করেছি।

যখন পুরো ভুবন আমার তখন সেই আমি ই সবথেকে একা। এটা ইতিহাসের শিক্ষা ছিলো। রাজা রাজত্ব সব ছিলো কিন্তু একে একে আপনজন চলে গেছে দূর থেকে দূরে। ভালোবাসা অস্তাপারে,, সুখের স্মৃতি তে ধুলোর আস্তরণ পড়েছে তরফে তরফে। তুষার বৃষ্টি দেখার সঙ্গী গিয়েছে চলে।

মুন লাভারস: স্কারলেট হার্ট রাইও পর্ব 1

সব কেমন ধূসর, শুনসান নিরবতা। একাকীত্বের চরম গ্রাস, সবথেকে কষ্ট পেয়েছি যতবার ই ফ্ল্যাস ব্যাক দেখিয়েছে,, রঙিন অতীত একে একে জমে গেছে স্মৃতির জানালায়। অনেক ইমোশনাল একটা ড্রামা। আই ইন্ড আপ ক্রায়িং। ফিকশনাল স্টোরি বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি। কিন্তু ঐ কালো রোব, ধারালো কালো চোখ, পাপড়ির মতো ঠোঁট এই চন্দ্র প্রেমীকে ভুলতে পারছি না।

কেমন অন্য পৃথিবীতে ছিলাম। ট্রাজেডি সবসময় আমার পছন্দের জেনার। শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ, হ্যামলেট, রোমিও জুলিয়েট, ওথেলো এগুলো আমার এই জেনারকে ভালোবাসার একমাত্র কারণ,, সবে তখন নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলাম।
খুব বেশী গভীর স্টোরি না হলে আমি শূন্যতা অনুভব করি না। এই ড্রামা শেষ করে এখনো অন্য এক পৃথিবীতে আছি।

সব কিছু কেমন খালি খালি লাগছে,,, শূন্যতা অনুভব করছি। উপন্যাস অবলম্বনে হওয়ায় নিজের মনকে ফিকশন ফিকশন বলে সান্ত্বনা দিচ্ছি বাট সেই আটকে যাচ্ছি। অনেক বেশী লিখে ফেলছি শুধু কষ্টটাকে একটু কমাতে। বারবার মনে হচ্ছিলো এমন না হয়ে তো সবকিছু অন্য রকম হতে পারতো। কেনো সবকিছু এমন ভাবনার আরো বহুদূর দিয়ে গেলো??? ঘোর কাটবে না এমন স্টোরি।

মুন লাভারস: স্কারলেট হার্ট রাইও সিজন 2

সবসময় ই আমার কাছে সেরা একটা ড্রামা হয়ে থাকবে এবং ড্রামা দেখার মুহূর্তের অনুভূতি গুলোও আমি রিকল করতে পারবো।অধিকাংশ কে লাভারের ড্রামাটা দেখা,, তবুও যারা দেখেনি তাদের অনেক বেশী করে অনুরোধ দেখে ফেলুন।আমার এতবড় শ্রুতিহীন অগোছালো কথাগুলো পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

সার্ভাইভাল ড্রামাগুলো বরাবরই আমার একটু অন্যরকম ভালো লাগে।কঠিন সময়ে কাছের মানুষ কতটা দরকার, এরকম সময়ে মানুষ কতটা স্বার্থপর হতে পারে এরকম আরো অনেক ইন্টারেস্টিং কিছুর দেখা মিলে সার্ভাইভাল ড্রামাগুলোতে।

পুরোটা সময় জুড়ে আমি Hyun আর Sae Bom এর কেমেস্ট্রি দেখে প্রেমে পড়েছি। কোনো রকম রোমান্টিক সিন ছাড়াই কিভাবে চোখের ভাষায় ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয় ওরা পুরো ১০০ভাগ সফলভাবে দেখিয়েছে। প্রত্যেকটা মুহূর্তে মনে হয়েছে পার্টনার যদি হয় এরকম হওয়া উচিত নাহয় দরকার নেই।

মুন লাভারস: স্কারলেট হার্ট: রাইও নেটফ্লিক্স

মেইন লিড দুজন এক্টিং, কেমিস্ট্রি,এক্সপ্রেশন সব মিলিয়ে ১০/১০। এবার আসি বাকি ক্যারেক্টার গুলোর দিকে। একটা ড্রামায় সবার এক্টিং অন পয়েন্ট হলেই ড্রামাটা দেখার আগ্রহ বাড়ে এবং হ্যাপিনেস এই ক্ষেত্রে ০.১% ও পিছিয়ে নেই। প্রত্যেকটা এক্টর এর এক্টিং দেখে সহজেই ওদের ইমোশন বুঝা যাচ্ছিল। কিছু নেগেটিভ ক্যারেক্টারের জন্য এত মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো বলার বাহিরে।

এভাবেই বুঝা যায় ওদের এক্টিং অন পয়েন্ট হওয়ার কারনেই মেজাজ গরম করতে সফল হয়েছে ওরা। প্রথমে নেগেটিভ মনে হলেও পড়ে রাইটার মেয়েটার ভাই এর জন্য অনেক মায়া হচ্ছিলো।আরো কিছু মানুষকেই প্রথমে নেগেটিভ মনে করলেও পড়ে বুঝেছি আসলে কাহিনী অন্যদিকে, সবগুলো ক্যারেক্টারই একইরকম না থেকে ওদের মধ্যে অনেক ডেভেলপমেন্ট ছিল যার জন্য এই ড্রামাটায় এতটা রিয়েলিস্টিক ভাইভ।

এভাবেই প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার নিজেদের অভিনয়ের মাধ্যমে রিয়েলিস্টিক ফিল দিয়েছে পুরো ড্রামা জুড়ে। কাহিনী বেশি খোলাসা করলাম না যারা এখনো দেখেন নি এখনই দেখা শুরু করে দিন। সবশেষে “Happiness” অবশ্যই একটা মাস্ট ওয়াচ ড্রামা। আমার ২০২১ এর সেরাদের তালিকায় যোগ হলো আরেকটা নাম।

Leave a Comment